হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইমাম হুসাইন (আ.) উক্ত সফরে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেন এবং উম্মতে মোহাম্মাদীকে সত্যর পথে আহবান জানান। নিম্নে বিভিন্ন স্থানের নাম এবং সেখানে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনা উল্লেখ করা হল:
ইমাম হুসাইন (আ.) এর আধ্যাত্মিক সফর মদীনা থেকে কারবালা, ইসলাম, কোরআন, সুন্নী, নাজাফ, কুফা, মাশহাদ, সামেরা, মক্কা, মদীনা, জান্নাতুল বাক্বি, কাযমাইন, আলী, ফাতিমা, হাসান, আলী আকবর, হজরত আব্বাস, জয়নাব, সকিনা, কাসিম, জন, হুর, এজিদ, মাবিয়া, সিমার, হুরমুলা, আলী আসগার, মশক, ইমাম হুসাইন, হুসাইন, যোহাইর বিন কাইন।
ইমাম হুসাইন (আ.) এর মদীনা থেকে কারবালার সফর ছিল একটি আধ্যাত্মিক সফর। তিনি উক্ত সফরে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেন এবং উম্মতে মোহাম্মাদীকে সত্যর পথে আহবান জানান।
নিন্মে বিভিন্ন স্থানের নাম এবং সেখানে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনা উল্লেখ করা হল:
মদিনা:
২৮শে রজব ৬০ হিজরীতে তিনি তার আধ্যাত্মিক সফর শুরু করেন। সে সময় মদীনার গর্ভণর ছিল ওয়ালিদ বিন আতিক্বা, মাবিয়ার মৃত্যুর পরে তাকে নির্দেশ দেয়া হয় সে যেন ইমাম হুসাইন (আ.) এর কাছ থেকে বাইয়াত গ্রহণ করে। ইমাম হুসাইন (আ.) তার জবাবে বলেনঃ এজিদ হচ্ছে একজন ফাসিক, মদ্যপায়ি ব্যাক্তি, সে অবৈধ ভাবে বিভিন্ন নির্দোষ মানুষের রক্ত ঝরিয়েছে আমি কখনই তার বাইয়াত করব না।
যখন মারওয়ান বিন হাকাম ইমাম হুসাইন (আ.) এর কাছে এজিদের বাইয়াতের জন্য কথা বলে তখন ইমাম হুসাইন (আ.) তার জবাবে বলেনঃ হে খোদার শত্রু! আমাকে তোমরা ছেড়ে দাও কেননা আমি রাসুল (সা.) থেকে শুনেছি তিনি বলেছেন, আবু সুফিয়ানের সন্তানদের জন্য মুসলমানদের খেলাফতকে তিনি হারাম বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি যদি মুয়াবিয়াকে মেম্বারের উপরে দেখতেন তাহলে তিনি তাকে সেখান থেকে নিচে নামিয়ে দিতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে রাসুল (সা.) এর উম্মতেরা তা দেখেছে কিন্তু তারা কিছুই বলেনি। সুতরাং খোদা তাদের এজিদ নামক একজন ফাসেককে তাদের শাষক করে দিয়েছেন।
ইমাম হুসাইন (আ.) ৬০ হিজরী ২৮শে রজব রাতে তার নিজেদের আত্মীয়স্বজন এবং সঙ্গিসাথীদের নিয়ে মদীনা থেকে মক্কার দিকে রওনা হন।
ইমাম হুসাইন (আ.) মদীনা থেকে বাহির হওয়ার সময় দুটি ওসিয়ত করেন:
১. আমার মদীনা থেকে বাহির হওয়ার উদ্দেশ্যে হচ্ছে শুধুমাত্র রাসুল (সা.) এর উম্মতের হেদায়াতের জন্য আমি আমার নানা হজরত মোহাম্মাদ (সা.) এবং আমার বাবা হজরত আলী (আ.) এর ন্যায় আর্দশ অনুযায়ি জনগণকে সৎ কাজের উপদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ করব।
২. তারাই নিজেরদের মুসলমান বলে দাবী করতে পারবে যারা মানুষকে খোদার পথে দাওয়াত দেয় এবং সৎকর্ম করে। যারা আমাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে তারা রাসুল (সা.) থেকে কখনও পৃথক হবে না এবং তাদের প্রাপ্য অধিকার খোদার কাছে রয়েছে।
মক্কা:
৩রা শাবান থেকে ৮ই জিলহজ্ব ৬০ হিজরীতে ইমাম হুসাইন (আ.) মক্কাতে পৌছান এবং সেখানে আব্বাস বিন আব্দুল মোত্তালিবের ঘরে অবস্থান করেন। মক্কার জনগণ এবং হাজীরা তার সাথে সাক্ষাত করার জন্য ভিড় জমায়।
ইমাম হুসাইন (আ.) কুফাবাসীদের কাছ থেকে ১২ হাজার চিঠি আসার পরে মুসলিম বিন আক্বিলকে ১৫ই রমজান নিজের প্রতিনিধি হিসেবে কুফাতে প্রেরণ করেন।
ইমাম হুসাইন (আ.) মুসলিমের চিঠির উপরে ভিত্তি করে এবং মক্কাতে রক্তপাত হারাম বলে তিনি হজ্ব ছেড়ে দিয়ে ওমরা করেন এবং ৮ই জিলহজ্ব তিনি মক্কা থেকে ইরাকের দিকে রওনা হন।
তিনি মক্কা ছেড়ে আসার পূর্বে জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা রাসুল (সা.) এর আহলে বাইতগণ খোদার সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট। যারাই তাদের নিজের রক্তকে খোদার পথে এবং আমাকে সাহায্যে করার কাজে উৎসর্গ করতে চাই তারা যেন আমার সাথে এই আধ্যাত্মিক সফরে অংশগ্রহণ করে।
সাফ্ফা:
বুধবার ৯ই জিলহজ্ব ৬০ হিজরীতে ইমাম হুসাইন (আ.) সাফফা নামক স্থানে পৌছান। তিনি সেখানে তাঁর সফর সঙ্গিদের উদ্দেশ্যে বলেনঃ আমি স্বপ্নে আমার নানা হজরত মোহাম্মাদ (সা.) দেখেছি তিনি আমাকে এক গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্ব দান করেছেন আমি অবশ্যই তা সম্পাদন করব।
উক্ত স্থানে ফারাযদাক্ব নামক একজন কবির সাথে ইমাম হুসাইন (আ.) এর সাক্ষাত হয় সে কুফার জনগণের অবস্থা সম্পর্কে তাঁকে অবগত করে। সে বলে, হে ইমাম! কুফার জনগণের অন্তর আপনার সাথে কিন্তু তরবারি বণী উমাইয়ার সাথে। ইমাম হুসাইন (আ.) তার উত্তরে বলেন, যদি ভবিষ্যতের সংঘটিত ঘটনাবলি যদি আমার মন মতো হোক বা না হোক আমি খোদার শুকরিয়া জ্ঞাপন করি। কেননা যাদের অন্তর হক্ব এবং তাকওয়ায় পরিপূর্ণ তারা কখনও সঠিক পথ থেকে পিছু পা হয় না এবং এজন্য তারা ক্ষতিগ্রস্থও হয় না।
বাতনুল আক্বাবা:
শুক্রবার, ২৫ জিলহজ্ব, ৬০ হিজরীতে ইমাম হুসাইন (আ.) বাতনুল আক্বাবাতে পৌছান এবং তিনি বলেন, বণী উমাইয়ারা আমাকে হত্যা না করা পর্যন্ত ক্ষ্যান্ত হবে না এবং যখনই তারা এরকমটি করবে তখনই খোদা তাদের উপরে এমন একজনকে কর্তৃত্ব দান করবে যে সে তাদেরকে লাঞ্ছিত করবে।
শারাফ বা যু হুসাম:
শনিবার, ২৬ জিলহজ্ব, ৬০ হিজরীতে ইমাম হুসাইন (আ.) শারাফ বা যু হুসাম নামক স্থানে পৌছান এবং সবাইকে নির্দেশ দেন যে সবাই যেন যথেষ্ট পরিমাণ পানি সংগ্রহ করে এবং সকালেই তারা এখান থেকে রওনা হবেন। পথিমধ্যে প্রায় দুপুরের কাছাকাছি ইমাম শত্রুদের সৈন্যদের সম্মুখিন হন এবং শত্রুদের আগে তারা যু হুসাম নামক স্থানে পৌছান। সেখানে ইমাম (আ.) নির্দেশ দেন যেন শত্রুদের সৈন্য এবং তাদের ঘোড়াদের তৃষ্ঞা নিবারণ করা হয়।
ইমাম হুসাইন (আ.) এর শত্রু পক্ষের সৈন্যরা যোহর ও আসরের নামাজ ইমাম হুসাইন (আ.) পিছনে আদায় করে।
এরপরে ইমাম (আ.) শত্রুদেরকে উদ্দেশ্যে করে বক্তব্য রাখেন। যখন ইমাম (আ.) সেখান থেকে চলে যেতে চান তখন হুর বাধা হয়ে দাড়ায়। ইমাম তাকে বলেন, তোমার মা তোমার মৃত্যুতে শোকাহত হোক! তুমি আমার কাছে কি চাও? হুর বলে, আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন আমি আপনাকে উবাইদুল্লাহর কাছে নিয়ে যায়। আর যদি আপনি তা না মেনে নেন তাহলে এমন এক পথ নির্বাচন করুন যেন তা মদীনার দিকে না হয় বরং তা কুফার দিকে হয় । তারপরে সেখানে ইমামের সাথে হুরের আরো কিছু কথা হয়।
বায়াযে:
রবিবার, ২৭ জিলহজ্ব, ৬০ হিজরীতে ইমাম হুসাইন (আ.) বায়াযে নামক স্থানে পৌছান। ইমাম হুসাইন (আ.) এবং হুরের সৈন্যরা উভয়ে একত্রে অবস্থান করে। ইমাম (আ.) এখান হুরের সৈন্যদেরকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, বণী উমাইয়ারা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছে এবং খোদার নির্দেশাবলিকে তুচ্ছজ্ঞান করেছে, ফেসাদ সৃষ্টি করেছে, খোদার নির্ধারিত সীমানা অতিক্রম করেছে, বাইতুল মালকে নিজস্ব মালিকানা মনে করেছে, হারামকে হালাল এবং হালালকে হারাম করেছে। তোমরা আমার কাছে চিঠি লিখেছিলে এবং বলেছিলে তোমরা আমার বাইয়াত করেছ। এখন যদি তোমরা তোমাদের কৃত ওয়াদার উপরে অটল থাকো তাহলে বুদ্ধিমানে কাজ করেছ কেননা আমি হচ্ছি তোমাদের রাসুল (সা.) এর নাতি ও হজরত ফাতেমা (আ.) এর সন্তান। আর যদি বাইয়াত ভঙ্গ করো, যদিও তোমাদের কাছে এটা অসম্ভব কিছুই না। কেননা তোমরা আমার বাবার আলী (আ.), আমার ভাই হাসান (আ.) এবং আমার দূত মুসলিম ইবনে আক্বিলের সাথে ওয়াদা ভঙ্গ করেছ। তিনি আরো বলেন, হে লোকেরা! রাসুল (সা.) বলেছেন, যদি কোনো অত্যাচারী বা শাষক যে ওয়াদা ভঙ্গ করে, হারামকে হালাল ঘোষণা করে, রাসুল (সা.) এর সুন্নাতের উপরে আমল না করে তাহলে তার চীরস্থায়ী ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম। ...চলবে...
আপনার কমেন্ট